আমি যে সেই পাহাড়ি নদী!
জন্ম নিলাম তুষার জলে,
কোন সে সুদূর পর্বতশীরে।
কেউ জানে না উৎস কোথায় ,
আমি যে বন্দী ভেতর গুহায় ।
আমি যে সেই পাহাড়ি নদী!
কখনও ঘোলা কখনও স্বচ্ছ,
কখনও উত্তাল কখনও শান্ত।
কতো পাহাড় পাথর ভেঙ্গে,
নেমে এলাম তোমার সনে।
বুঝিনি নিচে এত বড় খাদ,
নামতে গিয়ে হবো ছুরমার।
আমি যে সেই পাহাড়ি নদী!
আমার ভাঙন দেখতে এসে,
কেউ বা কাঁদে কেউ বা হাসে।
তারপর পাই সমভূমি,
লোকে বলে মরুভূমি।
আমি যে সেই পাহাড়ি নদী!
মরুভূমে আসার পরে,
দু-দশ টা চারা গজাল পাড়ে।
মুক্ত আকাশ তপ্ত বাতাস,
চিন্তা করার নাই অবকাশ।
বেশ কিছু দিন কাটল এমন,
মরুভূমি বলল প্রথম,
কি হয়েছে? উদাস কেন?
উদাস তো নই, ক্লান্ত এখন।
আমি যে সেই পাহাড়ি নদী!
এখানে বড়ই একা আমি,
দু-দশ টা ঘাস আর মরুভূমি।
বসে বসে ভাবি আমি,
ছিলাম পাহাড়ি নদী আমি।
ভয় পেত সব আমায় দেখে,
এখন সবাই মা মা ডাকে।
দু-দশ টা ঘাস হাজার হোল,
মানুষ কিছু ঘর বানাল।
মরুভূমি এখন সবুজ,
নাম হয়েছে তার কালিভুজ।
আমি যে সেই পাহাড়ি নদী!
কেউ এসে তাঁর চাল ধুয়ে যায়,
কেউ বা সাঁতরে ওপারে যায়।
মরুভুমি শহর হোল,
দুই পাড় আমার বেঁধে দিল।
কেউ বা এসে মরা ভাসায়,
কেউ বা নিজের পাপ ধুয়ে যায়।
ধুপ ধুনা আর পচা ফুলে,
ওঠে আমার গা গুলিয়ে।
আমি যে সেই পাহাড়ি নদী,
মনে পড়ে যায় উত্তাল জল,
খরস্রোতা স্বচ্ছ শীতল।
কষ্ট ছিল সত্য ছিল,
শব্দ হত খল বল খল।
দুঃখে রাগে অভিমানে,
বলি শুধু মনে মনে।
নাই বা হতে এতই কঠর,
এতই বিমুখ এতই নিঠুর।
হারিয়ে যেতাম তোমারই কোলে,
ডাকতো না কেউ মা মা বলে।
- Moumita Sahu
No comments:
Post a Comment