Sunday, 21 August 2016

স্মৃতি ভরা ঘ্রাণ

নতুন ধানে ভরে আছে মাঠ ।
মাঠের ধারে বুড়ো  আম গাছ ।।
গাছ ভরা কিছু আমের কুঁড়ি ।
তপ্ত  জলে  ভরে আছে  দীঘি ।।
গন্ধরাজের মিষ্টি সুবাস ।
বয়ে  নিয়ে আসে উষ্ণ বাতাস ।।
ছোট বড় বেল গাছ থেকে  পড়ে ।
পাঁকের গন্ধ পুকুর পাড়ে ।।
শুকনো পাতায় দাওয়া যায় ভরে ।
বিকেল শেষের  বৈশাখী ঝড়ে ।।

চোখ বুজে আমি জাবর কাটি,  পাই গ্রীষ্মের ঘ্রাণ ।
ছোট ছোট  স্মৃতি ভেসে ওঠে মনে,  জুড়ায় আমার প্রাণ  ।।

বর্ষার জলে , ভিজে যায় ধুলো,  বুনো ঝোপ  ভিজে যায় ।
বোঁটকা গন্ধে পথ ঘাট ভরে,  সোঁদা গন্ধ নিমেষে মিলায় ।।
সোনালি রঙের  খড় পচা জল রাস্তায় জমে যায়।
সন্ধ্যা পরে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে, কোলা ব্যাঙ গান গায় ।।
স্যাঁতস্যাঁতে ঘর, ঠাণ্ডা বিছানা, গুমে যাওয়া যত  মশলা ।
কখনো কখনো এক মুঠো  রোদ , উঁকি মারে শেষ বেলা ।।

চোখ বুজে আমি জাবর কাটি,  পাই বর্ষার ঘ্রাণ ।
ছোট ছোট  স্মৃতি ভেসে ওঠে মনে,  জুড়ায় আমার প্রাণ ।।

ভোরের বেলা শিশিরের ঘ্রাণ, ঠাণ্ডা  স্নিগ্ধ বাতাস ।
হলুদ গাঁদা, ডালিয়া , জিনিয়া ,  রোদ ঝলমলে আকাশ ।।
ন্যাপথিলিনে মোড়া শীতের পোশাক,  রোদে ঝলসানো লেপ ।
শীতের সকালে খেজুরের রস,  নলেন গুড়ের সন্দেশ ।।
সন্ধ্যে বেলায় পিঠে পুলি সাথে,  তালের মিঠা রুটি ।
আগুন পোহাতে বসে যায় সব,  ঠাণ্ডায় গুটিসুটি ।।

চোখ বুজে আমি জাবর কাটি,  পাই শীতের ঘ্রাণ ।

ছোট ছোট  স্মৃতি ভেসে ওঠে মনে,  জুড়ায় আমার প্রাণ  ।।                          


মৌমিতা সাহু , ব্যাঙ্গালোর
21/08/2016

Sunday, 7 August 2016

গল্পকথা

ঝড় উঠেছে  বইছে বাতাস, উড়ছে ধুলোবালি ,
কাছে বসো আজ তোমাকে অন্য গল্প বলি ।

ঊষা  :

দিনটা ছিল অন্য রকম ,
ঠিক একদম মনের মতন ।

মা চলেছে মেয়ের বাড়ী ,
সাথে ছোট্ট মিষ্টির হাঁড়ি ।

শ্বশুর বাড়ী নয়তো ভালো,
মেয়ের কপাল কয়লা কালো ।

সংসার করে দুঃখী মেয়ে ,
দেখে না কেউ  তাকে চেয়ে ।

বোনের বিয়ের আনন্দেতে ,
মা এসেছে তাকে নিতে ।

আছে কাপড়  দু একখানা ,
নাইতো নতুন এক আধ খানা ।

সেই সব সে নিলো গুছিয়ে ,
মায়ের সাথেই যাবে চলে ।

মা মেয়েতে দুপুর শেষে ,
রান্না ঘরের কোনে বসে ।

আধপেটা খেয়ে উঠল দুজন ,
একেই দুইয়ের শুধু প্রিয়জন ।

শত অনুরোধের শেষে,
হল না  যেতে দেওয়া তাকে ।

যাচ্ছে চলে  মা একলা ,
থাকলো না আর একটি বেলা ।

নিয়ে যাও মা তোমার সাথে ,
হাতটা ধরো তোমার হাতে ।

ফিরতে চাইনা আর এখানে ,
ঠাঁই দিও মা তোমার  থানে ।

কান্না আসছে চোখ ভরিয়ে ,
একবার মা চাওনা ফিরে ।

ফিরলো না মা একটি বারও ,
মা যে  কাঁদছে বেশি আরও ।

মধ্যাহ্ন :

বসেছে মা ঘরের দোরে ,
রেখেছে তাকে লোকে ঘিরে ।

কখনো সে পাথর মূর্তি ,
কখনো তার প্রাণের আর্তি ।

ভাসল সকল চোখের জলে ,
ছোট মেয়েটা গেছে চলে ।

ভিক্ষা চেয়ে  যে আয়োজন ,
তার বুঝি আর নাই প্রয়োজন ।

বিয়ের লগ্ন আসার আগে ,
চিতায় ভস্মিভুত হবে ।

সেদিন সকাল বেলা উঠে ,
ঘাস কাটতে গেলো মাঠে ।

ঘাস কেটে তা বিক্রি করে ,
ভাত কাপড়ের জোগাড় তরে ।

কচি কচি ঘাস কাটল কিছু ,
পাঁচজনা তার নিয়েছে পিছু ।

হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল এমন ,
মানুষ বেসে  শয়তান যেমন ।

তাদের মনে  নাই করুণা , 
জীবন নিয়ে মেটাল তৃষ্ণা ।

সাথে সেদিন মা ছিলনা ,
শেষ রক্ষা তাই হল না ।

মাগো তুমি কেন গেলে ,
আমায় সেদিন  একলা ফেলে ?

তোমার সাথে কেন নিলেনা ?
তাইতো দেখা আর হল না ।

সন্ধ্যা :

একদিন যায় দুদিন যায় ,
মায়ের চোখের জল না শুকায় ।

একজন গেছে তাকে ছেড়ে ,
অন্য জনা বেঁচেও মরে ।

নামে মাত্র আছে পিতা ,
তবুও মেয়ে নির্যাতিতা ।

একদিন শেষে  এলো খবর ,
মায়ের মেয়ে হয়েছে নিথর ।

মারল কিনা মরল নিজে ,
কাজ নেই আর সে সব খুঁজে ।

নিয়েছে বিদায় একে একে ,
আসে না কেউ মায়ের বুকে ।

কখনো আধপেটা খাওয়া ,
তার মধ্যেই সুখের হাওয়া ।

ছোট্টও থেকে বড় হওয়া ,
হঠাৎ তাদের চলে যাওয়া ।

সেসব  ছবি ভেসে ওঠে ,
চিকচিক করে মায়ের চোখে ।

শূন্য বুকটা হুহু করে,
দুচোখে শুধু আগুন ঝরে ।

মা যে আজও অপেক্ষাতে ,
হবেই দেখা তাদের সাথে ।।



মৌমিতা সাহু

ব্যাঙ্গালোর, ০৭/০৮/২০১৬